[আপডেট: নাঈম খেয়াল করিয়ে দিল, দ্বিতীয় নাজিল হওয়া আয়াত নিয়ে মতপার্থক্য আছে, কিছু কিছু বইয়ে, এমনকি মেজরিটি স্কলারের মতে, সূরা মুদ্দাসসির-র বিখ্যাত আয়াত দ্বিতীয় নাজিল হওয়া আয়াত হিসেবে উল্লেখ করা আছে। যেটা নিয়ে আমি পরের পর্বে লিখব ইনশাআল্লাহ।]
ভূমিকা:
এই পেইজের লেখাগুলো আমি মূলতঃ ডাঃ মেরাজ মহিউদ্দিনের লেখা বই: Revelation: Story of Muhammad PBUH, [আরও সাথে আছে ড. ইয়াসির ক্বাদীর বই: The Sirah of the Prophet (PBUH)] থেকে নিজে পড়ে লিখছি। যেকোনো লেখা পড়ার জন্য ডাঃ মেরাজ মহিউদ্দিনের বইয়ের Quranic Year বা কুরআনিক বছর টেকনিক সম্পর্কে প্রথমে জানতে হবে। নিচের লিংকে বইয়ের লিংকসহ সেটা ব্যাখ্যা করা আছে। আর এখন পর্যন্ত লেখায় কুরআনের মোট আয়াতের কতটুকু কভার হয়েছে, সেটা ব্যানারের ছবিতে হাইলাইট দেখে বোঝা যাবে। আমার আর আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। ধন্যবাদ।
পর্ব - ১ । সিরাহ বছর: ১ । পড়ো, কিরাআত করো
রাসূল (সাঃ)'র যখন বয়স ৪০'র কাছাকাছি, তখন তিনি 'হানিফ'-একক সত্তায় বিশ্বাসী হয়ে তাহান্নুত প্র্যাক্টিস করতেন, অর্থাৎ হেরা পাহাড়ের গুহাতে গিয়ে ধ্যান করতেন। মক্কার মূর্তি পূজা, সুদের ব্যবসা আর ধনী-গরিবের বৈষম্য থেকে দূরে থাকতেই তিনি সেটা করতেন। ততদিনে তিনি খাদিজাকে (রাঃ) কে বিয়ে করেছেন, তাঁর (সাঃ)'র আর্থিক দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে, কুরাইশদের কাছে তিনি সম্মানিত, 'আমিন' হিসাবে পরিচিত। কিন্তু তারপরেও কী যেন নাই! হেরা পাহাড়ের গুহা থেকে নিচে মক্কা দেখা যায়। পাহাড় বেয়ে উঠার সময় অনেক সময়ই তিনি অলৌকিকভাবে 'আসসালামুয়ালাইকুম, ইয়া রাসূলুল্লাহ' শুনতে পেতেন।
এক রমজান মাসে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) এক মানুষের আকৃতি নিয়ে হঠাৎ করেই হাজির হন। রাসূল (সাঃ) ভয় পেয়ে যান। তাঁকে জোরে জড়িয়ে ধরে জিব্রাইল (আঃ) বলে উঠেন: 'ইকরা' অর্থাৎ 'পড়ো'। আমাদের রাসূল (সাঃ) অক্ষরজ্ঞানহীন ছিলেন, তিনি পড়তে পারতেন না। জিব্রাইল (আঃ) জোরে চাপ ছেড়ে দিলে, রাসূল (সাঃ) বলে উঠলেন, আমি পড়তে পারি না। আবারো সজোরে চাপ দিয়ে জিব্রাইল (আঃ) বললেন, 'ইকরা'/পড়ো; আমাদের রাসূল (সাঃ) আবারো বললেন, আমি তো পড়তে পারি না। তৃতীয়বারও একই ঘটনা ঘটলো। কোনো কোনো তাফসীরকারীরা ব্যাখ্যা করেছেন, আরবি 'ইকরা' শব্দের অর্থ 'পড়ো' হয়, আবার 'কিরাআত' বা আমরা যাকে তেলাওয়াত বলি, সেটাও হয়। আমাদের রাসূল (সাঃ) সম্ভবত প্রথম 'পড়ো' অর্থ মনে করেই বলছিলেন, তিনি পড়তে পারেন না। এরপর জিব্রাইল (আঃ) কুরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াত বলে উঠলেন:
[সূরা আল-আলাক, সূরা নম্বর ৯৬: আয়াত ১- ৫]:
** পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন [সবকিছু]। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আকড়িয়ে থাকা জমাট রক্তপিন্ড থেকে। পড়ো, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না। **
এই ঘটনায় ভয়ে হতবিহবল হয়ে রাসূল (সাঃ) দৌড়ে পাহাড় থেকে নেমে তাঁর স্ত্রী খাদিজার কাছে গেলেন, আর চিৎকার দিয়ে বললেন, "আমাকে ঢাকো, আমাকে ঢাকো"। খাদিজা (রাঃ) তাঁকে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। তিনি খাদিজা (রাঃ) কে বললেন কী ঘটেছে। রাসূল (সাঃ) ভয় পেয়ে ভাবলেন তাঁকে কিছু কি 'আছর' করেছে? খাদিজা (রাঃ) তাঁকে আস্বস্ত করলেন, আর তাঁকে নিয়ে গেলেন তাঁর কাজিন বৃদ্ধ ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে। ওয়ারাকা একজন ক্রিস্টান 'হানিফ' - একক সত্তায় বিশ্বাসী ছিলেন। ওয়ারাকা সব শুনে বললেন, এটা সেই জিব্রাইল (আঃ) যে কিনা আগেও নবীদের কাছে ওহী নিয়ে এসেছেন। আরো আফসোস করে বললেন: "আমি যদি তরুণ থাকতাম, তাহলে আমি সেইদিন আপনাকে সমর্থন করতাম যেইদিন আপনার লোকেরাই আপনাকে তাড়িয়ে দিবে!" -- রাসূল (সাঃ) অবাক হলেন! কুরাইশরা তাঁকে তাড়িয়ে দিবে? যেই কুরাইশরা তাঁকে সন্মান করে, শ্রদ্ধা করে 'আমিন' বা বিশ্বাসী ডাকে, সেই কুরাইশরা!
এরপর কয়েকদিন সব চুপচাপ। আর ওহী আসে না। রাসূল (সাঃ) মনে মনে ভাবলেন তিনি কী পাগল হয়ে গেছেন? এই চিন্তায় একটু অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করলেন, কুরাইশরাও তাঁর (সাঃ)'র এই আচরণে বলাবলি করা শুরু করলো, মুহাম্মদ (সাঃ) -এর যেন কী হয়েছে। এরপর আবার একদিন জিব্রাইল (আঃ) ওহী নিয়ে আসলেন, আর তাঁর (সাঃ) আশংকা দূর করলেন:
[সূরা আল-কালাম, সূরা নম্বর ৬৮, আয়াত ১ - ৬]:
** নুন। শপথ কলমের আর [ফেরেশতা লেখকরা] যা লেখে তার, আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি পাগল নন। নিশ্চয়ই আপনার জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার, আর নিশ্চই আপনি মহান চরিত্রের উচ্চমার্গে উন্নীত। শীঘ্রই আপনি আর তারা [যারা আপনার সমালোচনা করে] দেখতে পাবে কে পাগলামিতে আক্রান্ত **
এরপর আবারো সব চুপচাপ। এবার আরো লম্বা সময় ধরে কোনো ওহী আসে না। রাসূল (সাঃ) দ্বিতীয় দফায় ভাবা শুরু করলেন, তবে কী আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর উপর কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছেন? তিনি আবারো অনিশ্চয়তা আর আত্ম-সন্দেহে ভুগতে শুরু করলেন। খাদিজা (রাঃ) তাঁকে এবারো সান্তনা দিলেন, তিনি (সাঃ) তো কারো কোনো ক্ষতি করেন না, গরিব-দুঃখীদের সহায় হন, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেন না! আল্লাহ তা'য়ালা কেন তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হবেন? এর পরপরই আবার জিব্রাইল (আঃ) ওহী নিয়ে আসলেন, এইবার আমাদের পরিচিত সূরা আদ-দ্বোহা/পূর্বাহ্ন:
[সূরা আদ-দ্বোহা,সূরা নম্বর ৯৩, আয়াত ১ - ১১]:
** শপথ পূর্বাহ্নের/ ভোরের। শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়। আপনার রব (পালনকর্তা) আপনাকে ত্যাগ করেনি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। আপনার জন্যে পরকাল প্রথম (ইহকাল) অপেক্ষা শ্রেয়। আপনার রব সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন। তিনি কি আপনাকে এতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি এতীমের প্রতি কঠোর হবেন না। এবং সেহেতু সওয়ালকারীকে/ভিক্ষুককে খেদিয়ে/ধমক দেবেন না। এবং আপনার রবের নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। **
Assalamualaikum… can you please include as the reference from where you’re collecting the Seerah, like from which book?? Jazakallahu khairan… wonderful work indeed.. Barakallahu Feekum..